ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধিঃ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা ইটভাটা কৃষিজমির টপ সয়েল গিলে ফেলছে। মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে প্রাকৃতিক পরিবেশ। হুমকির মুখে পড়েছে জনজীবন। সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব। জনবসতিপূর্ণ এলাকায় স্থাপিত এসব অবৈধ ইটভাটায় কৃষিজমির টপ সয়েল ব্যবহার করায় উর্বরতা হারাচ্ছে ফসলি জমি। জনবসতি এলাকার এক কিলোমিটারের মধ্যে কেউ ইটভাটা করতে পারবে না, সরকারের পক্ষ থেকে এমন নির্দেশনা থাকলেও তা মানছেন না কোনো ইটভাটার মালিক। ইটভাটার কালো ধোঁয়ায় স্বাস্থ্যঝুঁকিতে ইউনিয়নবাসী। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ইটভাটার চিমনি দিয়ে কালো ধোঁয়া বের হচ্ছে। কোনো কোনো ভাটার সামনে কয়লার স্তূপ থাকলেও আড়ালে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। ভাটার ভেতরে রয়েছে কাঠের স্তূপ। আশপাশের গাছগুলো বিবর্ণ। মরেও গেছে অনেক গাছ। এক্সকাভেটর দিয়ে কৃষি ও ফসলি জমির টপ সয়েল কাটা হচ্ছে। কোনো কোনো জমি ১৫ থেকে ২০ ফুট গভীরে মাটি কাটা হচ্ছে। আর ভেঙে পড়ছে আশপাশের জমি। ইটভাটায় মাটি নেওয়ার কাজে ব্যবহৃত ভটভটির দাপটে সড়কগুলোতে দেখা দিচ্ছে খানাখন্দ। এতে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে।
জানা যায়, গত কয়েক বছর আগে পরিবেশ দপ্তরের ছাড়পত্র বা যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন না নিয়েই উপজেলার হরিপুর গ্রামের পাশে মেসার্স রয়েল ব্রিক্স ও মের্সাস সততা ব্রিকস নামে দুটি ব্রিক্স ফিল্ড গড়ে উঠে। পরে পরিবেশ ও বায়ূ দুষণ ও ফসলি জমি নষ্টসহ ক্ষতিকর দিক উল্লেখ করে এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে বারবার ব্রিক্স ফিল্ড দুটির বিরুদ্ধে পরিবেশ অধিদপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েও কোন প্রতিকার হচ্ছেনা। এলাকাবাসী জানায়, পরিবেশ অধিদপ্তরের পাশাপাশি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসক, পানি উন্নয়ন বোর্ড, নাসিরনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসারসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে উক্ত অভিযোগের অনুলিপি দেয়া হয়েছে। এলাকাবাসীর দেয়া অভিযোগে বলা হয়, স্থানীয় প্রভাবশালী কাপ্তান মিয়া প্রশাসনকে মেনেজ করে ভেকু দিয়ে সরকারি খাস জায়গা, নদীর পাড় ও ফসলি জমির মাটি কেটে নেয়া হচ্ছে ইটভাটায়। ফসলী জমির টপসয়েল বা উর্বরা মাঠি কেটে নেওয়ার ফলে উক্ত এলাকার ফসলী জমি গুলোতে কোন ফসল হচ্ছে না এবং ফসলি জমির সেঁচের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে, তাছাড়া ইটভাটা দুটির নির্গত বিষাক্ত কলো ধোঁয়ায় আশে পাশের গাছপালার পাতা কালো রং ধারণ করেছে। এছাড়া ইটভাটা দুটির পার্শে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও একটি মাদরাসা অবস্থিত। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা দুষিত বায়ূও প্রভাবে নানা প্রকার রোগে আক্রান্ত হচ্ছে বলেও অভিযোগে দাবি করা হয়।
তথ্যানুসন্ধ্যানে নিয়ে জানা গেছে, হরিপুর এলাকা প্রায় ১৮ হাজার লোকের বসবাস। এক সময়ের নিভৃত পল্লীর বিশুদ্ধ বাতাস এখন আর এখানে নেই। রোদ্রে শুকানোর জন্য বাহিরে কাপড়-চোপড় নাড়া থাকলে কিছুক্ষণের মধ্যেই তা কালচে হয়ে যায়। ইতোপূর্বে বেশ কয়েকবার ইটভাটা দুটির বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমান আদালতে জরিমানা করা হয়েছে। হরিপুর গ্রামের অদিবাসী আওয়াল মিয়া জানান, আমি এগুলো নিয়া কথা বলায় ইটভাটার মাটির ট্রাকচাপায় আমার ৮ বছরের বাচ্চাকে খুন করে ফেলা হয়। পরে আমি নাসিরনগর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করি। মামলা নং-৬/২২,জি আর ১৮/২২।হরিপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ ফারুক বলেন, দুটি ইটভাটাই পরিবেশ বান্ধব নয়, তাই ইটভাটা দুটি বন্ধের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসি। এ ব্যাপারে পরিবেশ অধিদপ্তরের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার উপ পরিচালক খালেদ হাসান বলেন, আমরা নিয়মিত ভাবে কর্মসূচির অংশ হিসেবেই অবৈধ ইটভাটাগুলির বিরুদ্ধে অভিযান করে আসছি। এলাকাবাসীর অভিযোগটি তদন্ত করে দেখা হবে।