ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রতিনিধি: মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বুকে ধারণ করে দেশকে এগিয়ে নেয়ার প্রত্যয় নিয়ে নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলা শত্রুমুক্ত দিবস পালিত হয়েছে।সোমবার (১১ ডিসেম্বর) সকালে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের আশুগঞ্জ গোলচত্বর এলাকায় মুক্তিযুদ্ধের সম্মুখ সমর স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন উপজেলা কমান্ড কাউন্সিল ও বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ।
পরে স্মৃতিস্তম্ভ থেকে একটি র্যালি বের হয়ে প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে ফের সম্মুখ সমর স্মৃতিস্তম্ভে এসে আলোচনা সভা করেন।আলোচনা সভায় আশুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা কমান্ড কাউন্সিল প্রশাসক শ্যামল চন্দ্র বসাকের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন আশুগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ হানিফ মুন্সী। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন উপজেলা সহকারি কমিশনার ভূমি কাজী তাহমিনা শারমিন, আশুগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক,যুয উন্নয়ন কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম মিজি, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল হাসেম আজাদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ জসীম, বীর মুক্তিযোদ্ধা ওয়াসেল সিদ্দিকি, বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল করিম, বীর মুক্তিযোদ্ধা মোজাম্মেল হক গোলাপ প্রমূখ। উল্লেখ্য, ১৯৭১ সালের ১১ ডিসেম্বরের এদিনেই পাক হানাদার বাহিনীকে বিতাড়িত করে আশুগঞ্জকে শত্রুমুক্ত করে মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় মিত্রবাহিনীর সদস্যরা। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় তৎকালীন লে. কর্নেল কে.এম. সফিউল্লাহ, লে. মো. হেলাল মোর্শেদ খান, মেজর আইন উদ্দিন ও মেজর নাসির প্রমুখ বীর সেনানীর সুসংগঠিত নেতৃত্ব সর্বস্তরের বীর জনতা পাক হানাদারদের হাত থেকে আশুগঞ্জ মুক্ত করেছিলেন।
আশুগঞ্জকে মুক্ত করতে গিয়ে সেদিন পাক হানাদারদের সাথে সম্মুখযুদ্ধে শহীদ হয়েছিলেন সুবেদার মেজর সিরাজুল ইসলাম, ল্যান্সনায়েক আব্দুল হাই, সিপাহী কফিল উদ্দিন, মুক্তিযোদ্ধা আবু তাহেরসহ আরও অনেকে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার অধিকাংশ এলাকা শত্রুমুক্ত হওয়ার পর একাত্তরের ৮ ডিসেম্বর ভারতীয় মিত্র বাহিনী বর্তমান আশুগঞ্জে প্রবেশ করে। সর্বশেষ যুদ্ধ সংগঠিত হয় আশুগঞ্জ উপজেলার সোহাগপুরে। তিনদিন তুমুল সম্মুখযুদ্ধে অর্ধ সহস্রাধিক মিত্রবাহিনী ও পাকবাহিনীর সদস্য নিহত হয়। সোহাগপুরের ভয়াবহ যুদ্ধে মিত্রবাহিনীর তিনটি ট্যাংক ধ্বংস হয়। শেষ পর্যন্ত মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর ভয়াবহ আক্রমণে টিকতে না পেরে ১০ ডিসেম্বর দুপুরের পর থেকে আশুগঞ্জ থেকে পাক সেনারা পালিয়ে যেতে শুরু করে। আত্মরক্ষার জন্য পাকবাহিনী আশুগঞ্জ থেকে পালিয়ে ভৈরব যাওয়ার সময় মেঘনা নদীর উপর রেল সেতুটির একাংশ ডিনামাইট দিয়ে ধ্বংস করে দেয়। এতে সেতুটির দুটি স্প্যান ভেঙ্গে নদীতে পড়ে যায়। ১১ ডিসেম্বর আশুগঞ্জ উপজেলা সম্মপূর্ণ শত্রুমুক্ত হয়।