ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ বোর্ডের দু’জন প্রভাবশালী বিশেষজ্ঞ সদস্যকে অব্যাহতি দেওয়ার একটি সংবাদ গতকাল প্রায় প্রতিটি জাতীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। গত ৯ আগস্ট অনুষ্ঠেয় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটের ২৫৫ সভায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ কমিটি থেকে তাদের অব্যাহতি দেওয়া হয়।
সিন্ডিকেট হলো একটি বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার সর্বোচ্চ অথরিটি। বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল নিয়োগ অনুমোদনকারী সংস্থা সিন্ডিকেট। রেওয়াজ অনুযায়ী শিক্ষকসহ সকল নিয়োগ বোর্ড গঠনের জন্য সিন্ডিকেট বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের উপরই দায়িত্ব অর্পন করে। শিক্ষক নিয়োগের জন্য উপাচার্য নিয়োগ বোর্ডের গুরুত্ব অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিশেষজ্ঞ, সৎ চরিত্রের অধিকারী ও ক্লিন ইমেজের ব্যক্তিদের নাম সিন্ডিকেটে প্রস্তাব করলে সিন্ডিকেটের অনুমোদন সাপেক্ষে তা কার্যকর করা হয়।
ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৫৪তম সিন্ডিকেট সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৬টি বিভাগে শিক্ষক নিয়োগের নিমিত্তে সিন্ডিকেট বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে বিশেষজ্ঞ নিয়োগ দানের জন্য দায়িত্ব অর্পণ করে। সেই ক্ষমতাবলে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আল ফিকহ এ্যান্ড লিগ্যাল স্টাডিজ বিভাগের নিয়োগ বোর্ডের বিশেষজ্ঞ হিসাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক রহমতউল্লাহকে নিয়োগ দেন। বঙ্গবন্ধুর খুনি খন্দকার মোশতাক আহমেদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর অভিযোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাকে গত ২০ এপ্রিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সব একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি প্রদান করে।
একইভাবে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ফার্মেসি বিভাগের নিয়োগ নির্বাচনী বোর্ডে বিশেষজ্ঞ হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল ফার্মেসি বিভাগের অধ্যাপক আব্দুর রহমানকে নিয়োগ দেওয়া হয়। তিনি ফার্মেসি অনুষদের ডিন থাকাকালীন সময়ে অনুষদের তহবিল থেকে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে দুদকের মামলা চলমান রয়েছে।
উল্লেখিত, অধ্যাপকদের নিয়োগ বোর্ডে বিশেষজ্ঞ হিসেবে নিয়োগদানের পর গত ৯ আগস্টই ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় আমি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খুনি কুখ্যাত মোশতাকের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপনকারী অধ্যাপক রহমত উল্লাহ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের টাকা আত্মসাতের অভিযোগে দুদকের মামলার অভিযুক্ত অধ্যাপক আব্দুর রহমানকে কিভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হলো জানতে চাইলে কর্তৃপক্ষ এর কোন সদুত্তর দিতে পারেননি। আমি তাদেরকে নিয়োগ কমিটি থেকে এই মুহূর্তে অব্যাহতি দেওয়ার প্রস্তাব করলে তা গৃহীত হয়।
বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটে সরকার যাদের মনোনয়ন দিয়ে থাকে তাদের কাজই হলো সরকারের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক কর্মকাণ্ড বাস্তবায়নের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়টি সুষ্ঠু ভাবে পরিচালনার মাধ্যমে সরকারকে সহযোগিতা করা। অথচ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ বোর্ডে জাতির জনকের খুনির পক্ষাবলম্বনকারীকে অন্তর্ভুক্ত করা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের টাকা আত্মসাতের দায়ে দুদকের মামলার আসামিকে নিয়োগ বোর্ডের বিশেষজ্ঞ হিসেবে কিভাবে অন্তর্ভুক্ত হলো এ প্রশ্ন থেকেই যায়।
উক্ত নিয়োগের বিষয়ে সংবাদটি জাতীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পরও তাদের নিয়োগ বোর্ড থেকে এতদিন কেন বাদ দেওয়া হয়নি সে প্রশ্নও থেকে যায়। আমি দেখতে চেয়েছিলাম সরকার যাদের সিন্ডিকেটে সদস্য নিয়োগ দিয়েছে তাদের কেউ সিন্ডকেট সভায় বিষয়টি উত্থাপন করেন কিনা। কিন্তু সিন্ডিকেটের কোন সদস্য এ বিষয়টি উত্থাপন করেননি। বঙ্গবন্ধুর প্রেমী সেজে যারা দৌড়ঝাঁপ করে লবিং করে সিন্ডিকেট সদস্য হয়েছেন তাদের কাউকে এ বিষয়ে একটি কথাও বলতে দেখলাম না। শেষ পর্যন্ত আমাকেই এই স্পর্শ কাতর বিষয়টি উত্থাপন করতে হলো। তার মানে আমি যদি সিন্ডিকেটে প্রতিবাদ না জানাতাম তাহলে অভিযুক্ত এই দুই শিক্ষক নিয়োগ বোর্ডে বিশেষজ্ঞ পন্ডিত ব্যক্তি হিসাবে উপস্থিত হতেন। এ ক্ষেত্রে ধরে নেওয়া অমূলক হবে না তারা নিয়োগ বোর্ডে অংশ নিয়ে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের আত্বীয় স্বজন কিংবা স্বাধীনতা বিরোধী রাজাকার আলবদর আল সামসদের নাতি-পুতিদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ দিতেন। আর এ সকল শিক্ষকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে জঙ্গি পয়দা করতেন। এসব জঙ্গিরা ত্রিশ লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাকে কুঁড়ে কুঁড়ে খেত।
বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা আসলেই অভাগা। তাকে একাই সকল অপশক্তির বিরুদ্ধে লড়তে হচ্ছে। শত ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে তাঁর একক প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ আজ সারা বিশ্বে উন্নয়নের রুল মডেল। কিন্তু তিনি যাদেরকে বিশ্বাস করে এই উন্নয়নের অংশীদার করতে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব প্রদান করেছেন তাদের অনেকেই আজ নীতি আদর্শ ভুলে গিয়ে টাকার কাছে নিজেদের বিবেককে বিক্রি করে দিচ্ছন। মুক্তিযুদ্ধের সরকার ক্ষমতায় অথচ প্রশাসনসহ দেশের সর্বত্র আজ স্বাধীনতা বিরোধীদের জয় জয়কার। টাকার কাছে আজ বিক্রি হয়ে যাচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় বসানোর জন্য যারা নিজের জীবন বাজি রেখে যৌবনের সোনালী দিনগুলো রাজপথে কাটিয়ে দিয়েছেন, জেল, জুলুম, অত্যাচার ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন তাঁরা আজ দলের কাছে অপাংক্তেয়। দলে আজ তাদের কোন মূল্য নেই। সুবিধাবাদী বর্ণচোরারা আজ আওয়ামী লীগার সেজে সব দখল করে বসে আছে। এদের রুখে দাঁড়ানোর এখনই সময়।
লেখক: সিন্ডিকেট সদস্য ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ ও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রেসক্লাব এবং সাধারণ সম্পাদক স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদ।