মঙ্গলবার এ সংক্রান্ত সাকুর্লার জারির পরদিন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘এই সার্কুলারের স্পিরিট হল কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঋণ পুনঃতফসিল করবে না। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এপেক্স বডি হিসেবে শুধু রেগুলেটরি কাজ করবে।
“ব্যাংকগুলো ঋণ পুনঃতফসিল ও কাকে কী সুবিধা দিতে হবে তা নির্ধারণ করবে। কারণ ব্যাংক তার গ্রাহক সম্পর্কে ভালো করে জানে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক শুধু একটি গাইডলাইন দিয়ে সকলের জন্য নীতিমালা করে ন্যূনতম হার বেঁধে দিয়েছে।’’
এতদিন বড় ঋণ ও তিনবারের বেশি পুনঃতফসিলের বেলায় ব্যাংকগুলোকে বাংলাদেশ ব্যাংকের পূর্বানুমোদন নিতে হত ।
আর পুনঃতফসিলে পর ঋণের মেয়াদ সর্বোচ্চ দুই বছর বাড়ানো হত। নতুন নীতিমালায় তা ৮ বছর পর্যন্ত বাড়িয়ে দেওয়ার সুযোগ রেখে সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংক ঋণ পুনঃতফসিলে ‘মাস্টার সার্কুলার’ জারি করে।
এতে খেলাপি হওয়া ঋণ সর্বোচ্চ চারবার পুনঃতফসিল করার সুযোগ রাখা হয়।
এর আগে ব্যাংক খাতে আন্তর্জাতিক চর্চা অনুসরণের কথা বলে ২০১২ সালের জুনে ঋণ শ্রেণিকরণে কড়াকড়ি আরোপ ও পুনঃতফসিলে দেওয়া সুযোগ কমিয়ে মাস্টার সার্কুলার করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক।
বর্তমানে ব্যাংকে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১ লাখ ৩ হাজার কোটি টাকার উপরে। এর বাইরে ঋণ অবলোপন, পুনঃতফসিল ও মামলার কারণে প্রায় দেড় লাখ কোটি টাকার ঋণকে খেলাপির তালিকায় রাখা হয়নি।
নতুন নীতিমালায় ঋণ পুনঃতফসিলে আগের চেয়ে কম হারে ডাউনপেমেন্ট দেওয়ার সুযোগ রেখে ঋণের মেয়াদ বাড়িয়ে দেওয়া হয়।
এর ফলে উদ্যোক্তারা চাইলে কোনো ঋণের আংশিক পরিশোধ করে ৩০ বছর পর্যন্ত তা টেনে নিয়ে যেতে পারবেন বলে ব্যাংকাররা বলছেন।
এতে ব্যাংকে কাগুজে হিসাবে খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমে আসলেও তারল্য সংকট দীর্ঘায়িত হওয়ার পাশাপাশি শুধু প্রভাবশালীদের কাছেই ঋণ যাবে বলে শঙ্কা ব্যাংকার ও অর্থনীতিবিদদের।
নতুন গভর্নর হিসেবে আব্দুর রউফ তালুকদার কেন্দ্রীয় ব্যাংকে যোগ দেওয়ার পঞ্চম কার্যদিবসে ব্যবসায়ীদের এমন ছাড় দেওয়া হলো। খেলাপিদের ব্যাপক এ ছাড় সুবিধা দেওয়া নিয়ে প্রশ্ন ওঠার পর এ নিয়ে ব্যাখ্যা দিলেন মুখপাত্র।
সময় বাড়িয়ে দেওয়া ও ডাউনপেমেন্টের পরিমাণ কমিয়ে দেওয়ার বিষয়ে সিরাজুল বলেন, “ঋণ খেলাপিররা এমনিতেই সমস্যার মধ্যে রয়েছেন। অল্প সময় ও বেশি অর্থ দিয়ে তারা পুনঃতফসিলের সুবিধা নিতে পারছেন না। তাদের ঘুরে দাঁড়াতে সহযোগিতা করতে সুযোগটি দেওয়া হল।’’
এর আগেও বিভিন্ন সময়ে খেলাপিদের নানা ধরনের সুবিধা দিলেও তা কাজে আসেনি। ২০১৫ সালে বিশেষ ছাড়ে বড় খেলাপিদের ১৫ হাজার কোটি টাকার বেশি ঋণ পুনঃতফসিলের সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। সেই ঋণের বেশিরভাগই এখন ফের খেলাপি হয়ে গিয়েছে।
আবার বিশেষ সুবিধা দেওয়ার কারণ এবং খেলাপিরা আদতেই অর্থ পরিশোধ করবেন কি না এমন প্রশ্নে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র বলেন, ‘‘আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের একটি মানদণ্ড হচ্ছে খেলাপির হার হতে হবে ৪ শতাংশ। তা পূরণে খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল সুবিধা ভূমিকা রাখবে।’’
এবার ছাড়ের বিষয়ে সার্কুলারে বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট, করোনার প্রভাব, ইউক্রেইন-রাশিয়া যুদ্ধ ও দাতা সংস্থা আইএমএফ, বিশ্ব ব্যাংকের ঠিক করা মানদন্ডে উন্নীত হতে খেলাপী ঋণ কমিয়ে আনতে সার্কুলারটি করা হলো।
সিরাজুল ইসলাম জানান, ব্যাংকের পরিচালকদের ঋণ নেওয়ার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের পূর্বানুমোদন নেওয়ার বিধানটিতে কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের খেলাপি ঋণের হিসাব নিয়ে বরাবরই প্রশ্ন তুলে আসছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)।
২০১৯ সালের জুনে এক প্রতিবেদনে সংস্থাটি জানিয়েছিল, বাংলাদেশে প্রকৃত খেলাপির পরিমাণ ঘোষণার চেয়ে অনেক বেশি। ওই সময়ে প্রকৃত খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ২ লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকার বেশি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালের জুনে দেশে খেলাপি ঋণের পরিমাণ প্রথমবারের মত লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে হয়েছিল ১ লাখ ১ হাজার কোটি টাকা ও খেলাপির হার ছিল ১১ দশমিক ৬৯ শতাংশ।