মহামারী, রাশিয়া-ইউক্রেইন যুদ্ধের প্রভাব এবং দেশ-বিদেশের বিভিন্ন দুর্যোগের চিত্র তুলে ধরে দেশবাসীকে সঞ্চয়ী হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেছেন, “নিজস্ব সঞ্চয় আপনাদের রাখতে হবে। সেটা খাদ্য হোক, অর্থ হোক যেভাবে হোক। আপৎকালীন সময়ে যেন আপনার পরিবার কষ্ট না পায়, সেটা আপনাদের ব্যবস্থা করতে হবে। আর আমরা সরকার সবসময় পাশে আছি; আমরা থাকব, করব। কিন্তু তাছাড়া নিজেদেরও ব্যবস্থা নিতে হবে।”
মুজিববর্ষের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বৃহস্পতিবার সারাদেশে আরও ২৬ হাজার ২২৯টি পরিবারকে জমিসহ ঘর হস্তান্তর কার্যক্রমের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সরকার প্রধানের এ বক্তব্য আসে।
দেশের উন্নয়নে আওয়ামী লীগ সরকারের নেওয়া নানা পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “দুর্ভাগ্যের বিষয় হল, একদিকে করোনাভাইরাস, অপরদিকে ইউক্রেন এবং রাশিয়ার যুদ্ধ; আর এই যুদ্ধের সময় আমেরিকা রাশিয়ার ওপর স্যাংশন (নিষেধাজ্ঞা) দিয়েছে।
“যার ফলে আমাদের সার কিনতে সমস্যা হচ্ছে, আমাদের খাদ্য কিনতে সমস্যা হচ্ছে। কারণ ডলার দিয়ে (রাশিয়া থেকে) কেনা যায় না।”
এমন পরিস্থিতিতে শুধু বাংলাদেশ নয়; সারাবিশ্বে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে, জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে, খাদ্যের জন্য হাহাকার এবং উন্নতদেশগুলোতেও সেই হাহাকার দেখা যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী।
“আজকে আমেরিকা বলেন, ইংল্যান্ড বলেন, সব জায়গায় কিন্তু তারা ওই বিদ্যুৎ সাশ্রয় করা, পেট্রোল সাশ্রয় করা, ডিজেল সাশ্রয় করা, জ্বালানির সাশ্রয় করার সেই উদ্যোগ উন্নত দেশগুলোও নিয়েছে।”
বাংলাদেশকে এখনও ‘ভালোভাবে’ পরিচালনা করা যাচ্ছে মন্তব্য করে সরকারপ্রধান বলেন, “কিন্তু আমাদের এখন থেকেই সতর্ক থাকতে হবে এবং সতর্কতামূলক পদক্ষেপও আমরা নিয়েছি।
“তাই আমি সবাইকে অনুরোধ করব, বিদ্যুৎ সাশ্রয় করতে হবে, পানির ব্যবহার সেটাও সাশ্রয় করতে হবে, জ্বালানির ব্যবহার সেটাও সাশ্রয় করতে হবে; আর এক ইঞ্চি জমি যেন পড়ে না থাকে, খাদ্য উৎপাদন করতে হবে।”
অনেক উন্নত দেশেও খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “ইংল্যান্ডের মত জায়গায়- লন্ডনে এক লিটারের বেশি তেল কেউ কিনতে পারে না, খাবারের তেল। আমাদের তো এখনই ইচ্ছে করলে পাঁচ লিটার পর্যন্ত সবাই কিনতে পারছে। আমরা জোগাড় করে দিচ্ছি।”
খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে কোনো জমি ফেলে না রাখার পরামর্শ দেওয়ার পাশাপাশি পশুপাখি পালনের তাগিদ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “যে যা পারেন, কিছু একটা করেন; যেন আপনার নিজের খাবারের ব্যবস্থাটা আপনি নিজে করতে পারেন। তার ফলে আমাদের কারও কাছে হাত পেতে চলতে হবে না।”
বাংলাদেশ প্রাকৃতিক দুর্যোগের দেশ, সেই কথা মনে রেখে যে কোনো দুর্যোগ মোকাবেলার প্রস্তুতি রাখার উপর জোর দেন তিনি।
দেশের নানা সংকটে দেশের প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের ভূমিকার কথাও অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।
“আওয়ামী লীগ মানুষের সংগঠন; জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে গড়া সংগঠন। কাজেই মানুষের জন্যই আমাদের কাজ এবং সেটাই আমরা করে যাচ্ছি।”
স্পেন, ইংল্যান্ডসহ ইউরোপের বিভিন্ন জায়গায় ভয়াবহ দাবানলের কথা অনুষ্ঠানে তুলে ধরে যেকোনো সংকট মোকাবেলায় সবাইকে সঞ্চয়ে মনোযোগী হতে আহ্বান জানান তিনি।